Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রশিক্ষনের বিস্তারিত

কামারঃ

কামার পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করেন। অতি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায় গ্রামাঞ্চলে কামার পেশায় জড়িত। গ্রামের বাজারে অথবা নির্দিষ্ট পাড়ায় ছিল কামার পাড়া। লোহার কারিগরদের লোহা দিয়ে নানা দ্রব্যসামগ্রী বানানো, লোহা পেটানোর কর্কশ শব্দ, পোড়া গন্ধ, পোড়া লোহা থেকে বিচ্ছুরিত আগুনের স্ফুলিঙ্গই কামার পাড়ার সাধারণ দৃশ্যচ্ছবি। কামাররা এখন শুধু গ্রামেই বাস করেন না, শহরেও ছড়িয়ে পড়েছেন। ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজ, সেচকাজ এবং গৃহায়ণের সাথে কামারদের অস্তিত্ব সরাসরি সস্পৃক্ত। আগেকার দিনে অধিকাংশ ঘরবাড়ি এবং কৃষি-যন্ত্রপাতি কামারদের দ্বারা তৈরি হতো। তাদের প্রস্ত্ততকৃত সামগ্রীর মধ্যে দা, কোদাল, কুড়াল, শাবল, বটি, পেরেক, ছুরি, চিমটি, হাতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কৃষিকাজে ব্যবহূত যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে লাঙলের ফলা, কাস্তে, নিড়ানি, বেদে কাটি, খুন্তি ইত্যাদি। কামারগণ কাঠমিস্ত্রিদের ব্যবহার্য যেসব যন্ত্রপাতি তৈরি করেন সেগুলি হচ্ছে করাত, বাইশ, বাটালি, রান্দা, হাতুড়ি ইত্যাদি।

দূর অতীতে কৃষিকাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গভূমিতে কামার পেশার উৎপত্তি ঘটে। হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায়ের মধ্যে লোহার কারিগর তথা কর্মকার শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। প্রচলিত লোককাহিনী মতে কোনো এক শূদ্র মহিলার সঙ্গে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার প্রণয় থেকে কর্মকার বা কামারের জন্ম হয়। কামারদের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা বসুন্দরী, রানা, গঙ্গালিরি এবং বাহাল অথবা খোটা। এরা একই শ্রেণিভুক্ত না হলে বৈবাহিক সস্পর্ক স্থাপন করে না। এইচ.এইচ রিসলে-র মতে, পূর্ববাংলায় কামারদের তিনটি সামাজিক শ্রেণি হচ্ছে বুষ্ণপতি, ঢাকাই এবং পশ্চিমা। বুষ্ণপতিরা আবার তিন ভাগে বিভক্ত, যথা নালদিপতি, চৌদ্দসমাজ ও পঞ্চসমাজ। এদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বৈবাহিক সস্পর্ক স্থাপনে কোনো বাধা নেই।

বাংলাদেশের অধিকাংশ কামারই বৈষ্ণব কিন্তু অল্পসংখ্যক কামার শাক্ত ধর্মাম্বলম্বী। তাদের প্রিয় দেবতা বিশ্বকর্মা, যাকে ভাদ্র মাসের শেষদিনে মিষ্টান্ন, চিড়া, গুড়, ফুলফল, চন্দনের রস বা বাটা, গঙ্গাজল, কাপড় ও রৌপ্যালঙ্কার দিয়ে পূজা-অর্চনা করা হয়। একই সময় কামারদের ব্যবহূত যন্ত্রপাতিসমূহকেও উপাসনা করা হয়। মহিলারা অনন্তা, সাবিত্রী, ষষ্ঠী, পঞ্চমী ইত্যাদি ব্রত পালন ও নিস্তারিণী এবং মঙ্গলচন্ডীর কাহিনী পরিবেশন করে। মহিলা ও শিশুরা মিষ্টান্ন, দুধ, ফলমূল ইত্যাদি দিয়ে পূজা-অর্চনা করে।

গোঁড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শূদ্র সস্প্রদায়ের কামাররা অপেক্ষাকৃত ভাল অবস্থায় রয়েছে। সমাজে তারা অস্পৃশ্য নয়। গ্রামাঞ্চলে তারা তাদের কার্যক্রম, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করছে। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী নিয়ে গ্রামের মেলায় অংশগ্রহণ করে। বর্তমানে এ পেশায় অনেক মুসলমানকেও দেখা যায়। অনেক কামার তাদের পছন্দ অনুযায়ী গ্রাম এবং শহর উভয় অঞ্চলে অন্যান্য পেশাও গ্রহণ করে থাকে। 

 

নাপিত বা নরসুন্দরঃ

নাপিত বা নরসুন্দর এমন এক শ্রেণীর পেশাজীবি যারা বিভিন্ন ধরনের বা রকম ভাবে মানুষের চুল ছাঁটেন এবং দাড়ি - গোঁফ কামিয়ে থাকেন। আগে নাপিতরা অস্ত্রপ্রচার ও দন্ত চিকিৎসার মত কাজও করতেন। বর্তমানে সেফটি রেজর এর উন্নয়নের ফলে নাপিতের কাছে দারি-গোঁফ কামানো কমে এসেছে, তাই সাধারণত নাপিতরা চুলই ছেঁটে থাকেন। সকল নাপিতরাই চুলের সাধারণ ছাঁট দিয়ে থাকেন, তবে যে সব নাপিত সেলুনে চুল ছাঁটেন তারা অনেকেই বিভিন্ন স্টাইলে অথবা ফেন্সি চুলের ছাঁট দিয়ে থাকেন। নাপিতরা যেখানে চুল ছাঁটেন তাকে সাধারণ বার্বার সপ বা হেয়ার সেলুন অথবা শুধু সেলুনও বলা হয়ে থাকে। তবে খুব জরুরি প্রয়োজনে এবং বয়স্কদের চুল দারি কামাতে অনুরোধে অনেক নাপিত বাড়িতে গিয়েও চুল ছেঁটে দেন।